ফ্রিল্যান্সিং কথাটির সাথে এখন আমরা কম বেশি সব বয়সের মানুষই বেশ পরিচিত। ফ্রিল্যান্সিং এখন তরুণ সমাজের কাছে দিন দিন চাকুরির চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি নিজ কর্ম দক্ষতায় ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে। আবার অনেকেই এটাকে ফুলটাইম পেশা হিসেবেও নিচ্ছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ হোসেন পলক এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা সাড়ে ছয় লক্ষের বেশি। এই সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ১১ শতাংশ নারী (অর্থাৎ ৭১ হাজার ৫০০ জন)।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব ফ্রিল্যান্সিং কি? কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং? এবং কি ভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং মূলত অনলাইন থেকে আয় করার একটি মাধ্যম। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে আপনি মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। একথায় বলতে গেলে, গতানুগতিক ৮-৫ চাকুরীর বাইরে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যারা ব্যবসা করেন তাঁরা হলেন ব্যবসায়ী, যারা চাকুরী করেন তাঁরা হলেন চাকুরীজিবী, ঠিক তেমনি যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। যাঁরা নিজের মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে আয় করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং কে আবার স্বাধীন ভাবে কাজ করা বা মুক্ত পেশাও বলা হয়ে থাকে। উন্নত দেশগুলো মানসম্মত সার্ভিস এবং কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। আর এই সুযোগটিকে অনেক দেশ খুবই ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরাও যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বিশাল বাজারকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার এবং বেকারত্ব দূর করার অন্যতম মাধ্যম।
কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে দিন দিন আমাদের জীবনমান অনেক উন্নত হচ্ছে। এখন অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের অনেক কাজ অনলাইনের মাধ্যমে অভিজ্ঞলোক হায়ার করে করিয়ে নিচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের সকলের ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে রাখা প্রয়োজন। কারন, যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন তারা পড়াশুনার পাশাপাশি আয় করা ছাড়াও পড়াশুনা শেষ হলে চাকুরীর পিছনে দৌড়িয়ে হতাশ না হয়ে ফ্রিল্যান্সিং স্কিলকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারবে। আর যারা চাকুরীজীবী তারা নিজেদের কাজের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমেও এক্সট্রা আয় করতে পারবেন। চাকুরী স্থায়িত্বকাল কখনো চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল অর্জন করেন সেটা কখনোই বিফলে যাবে না।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এর আরও কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। যেমন:-
* ঘরে বসে কাজ করা যায়। অফিসের কোন প্রয়োজন নেই
* অফিসে যাওয়া আসার কোন ঝামেলা নেই
* তুলনা মুলক কম সময়ে বেশি ইনকাম
* সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই
* পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ
* নিজের কাজের মূল্য নিজেই নির্ধারনের স্বাধীনতা
* নিজের ইচ্ছে মতন কাজ করতে পারবেন
* যে কোন যায়গায় বসে কাজ করার সুযোগ
* সমান পারিশ্রমিকে বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কাজের সুযোগ
* একই সময়ে কয়েকজন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার স্বাধীনতা
* একই সময়ে কয়েকটি কোম্পানিতে কাজ করার স্বাধীনতা
* অনলাইনে সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়
* নিত্য নতুন বিষয় শেখার ও জানার সুযোগ
* স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর সুযোগ
* উন্নতি করতে কম সময় লাগে
* সব মাসে সমান উপার্জন হয় না, বেশি পরিশ্রম করলে বেশি উপার্জন করা যায়
কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আপনাকে স্কিল অর্জন করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় একটা স্কিল ঠিক করে এগিয়ে যাওয়া। আপনার সিলেক্টেড স্কিলের টিউটোরিয়াল ইউটিউব এ পেয়ে যাবেন, সেগুলো দেখে আপনি চাইলে খুব সহজেই শিখতে পারবেন। এছাড়াও স্কিল অর্জন করার জন্য বাংলাদেশে এখন অনেক সরকারি-বেসরকারি সুনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলো থেকে ভালো একটা আইটি প্রতিষ্ঠানে এডমিশন নিতে পারেন। আইটি প্রতিষ্ঠান এবং স্কিল নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচিত ফ্রিল্যান্সারদের থেকে পরামর্শ নিতে পারেন যারা অলরেডি এই পেশায় সফল।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যা যা প্রয়োজন:
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে আপনার খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। আপনাকে বিশাল কোন অফিস ভাড়া নিতে হবে না, যেহেতু আপনি আপনার বাসায় বসেই কাজ করতে পারবেন। তার জন্য কিছু জিনিস আপনার প্রয়োজন হবে। যেমন:-
* একটি ল্যাপটপ অথবা ডেক্সটপ কম্পিউটার
* ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ
* কাজ করার ইচ্ছে ও চেষ্টা
* কাজ শেখা ও শেখার পর অনুশীলন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও মানসিকতা
এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিকেশন সিস্টেম যেমন- জুম, স্কাইপ, ইমেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকতে হবে। কারন, যেহেতু
উন্নত দেশগুলিই বেশীরভাগ কাজ আউটসোর্স করে থাকে, তাই আপনি যখন আপনার ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগ করবেন তখন এ মাধ্যম গুলো কাজে লাগবে।
ইংলিশে আপনার দক্ষতা থাকতে হবে কারন ফ্রিল্যান্সিং একটা ইন্টারন্যাশনাল পেশা তাই যোগাযোগের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ভাষা ব্যবহার করতে হবে এবং যেকোনো সময় যেকোনো দেশে বসবাসকারী ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিতে হবে।
আশা করা যায় আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ফ্রিল্যান্সিং কি? কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং? এবং কি ভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং? এই সম্পর্কে সম্পন্ন ধারনা হয়েছে।
0 Comments